আমাকে সবাই জুতো বলে চিনে।যেই কোম্পানি থেকে আমার জন্ম তার নাম এপেক্স।একে আপনারা কম বেশি সবাই চিনেন জানেন।
মাস নয়েক আগের কথা।আমি ছিলাম সারাক্ষন পাহারায় একটি শোরুমে।অনেকে এসে দেখে।কারো পছন্দ হয়না দেখে নেয়না।একদিন জৈনক ভদ্রলোক(এতদিনে নাম মনে নেই) আমাকে এই এপেক্সের শোরুম থেকে কিনে এনেছেন ১৪০০ টাকায়।নিয়ে গেছেন সুন্দর বক্সে ভরে।আমাকে ব্যাবহার করছেন নিয়মিত।তিনি মনে হয় হতভাগা ছিলেন।অথবা “ডোন্ট কেয়ার” টাইপ ফ্যামিলির লোক ছিলেন।কোন একদিন (কেনার ১ মাসের মধ্যেই)হয়ত তার মনের ভুলে তিনি আমাকে হারান।হঠাত্ একদিন কি থেকে কি হয়ে গেল বুঝলামনা।নিজেকে দেখলাম জনবহুল এলাকায় রাস্তার পাশে।আগে ছিলাম এসির ভিতর।আর এখন আমাকে পরিস্কার করে রং মেরে সাজানো হয়েছে একটা টুকরিতে।কিছুক্ষন পর পর আমাকে গামছা দিয়ে মুছে রাখে।আহারে কি যত্ন! করছে আমাকে না দেখলে বিশ্বাস করবেন না।কিন্তু আমার ভাল লাগছেনা।এভাবে বসে থাকলে চলে?আমাদের আবার স্বভাব কি জানেন?কারে পায়ের নিচে না থাকলে নিজেকে খুবই অপরাধি মনে হয়।বুঝি যে নিজের জীবনটাই বৃথা।আরো ভাল না লাগার কারণ,রোদের মধ্যে থাকতে কতক্ষন ভাল লাগে?ওহ,আপনাদের জায়গার নামটাই বলা হয়নি।এটা বিখ্যাত গুলিস্তান এলাকা।জানেন তো এখানে ভদ্র! লোকদের আনাগোনা একসময় বেশি ছিল।এখন সবখানেই আছে এই ভদ্র লোকেরা।
মাস সাতেক আগের কথা।তো একদিন,আমাকে এক ভদ্র লোকের পছন্দ হয়।এবং ৫৫০ টাকায় কিনে নিয়ে একটা পলিথিনে! ভরে নিয়ে আসেন।৫৫০ টাকায় হলে কি হবে?আমি এখনো নতুনের মত আছি।জাস্ট একটু কালি মাখাতে হয়েছে।এটা ব্যাপারনা।এটাকে মেকাপ বলতে পারেন।আমার বর্তমান মালিক ভদ্রলোকের নাম আমি জানি।তবে সবার শেষে বলব।যাই হোক,আমাকে দিব্যি ব্যবহার করছেন।অথচ আমাকে মেকাপ করাতে সময় পাননা মালিক।কি মেকাপ করাবেন?যখন থেকে বুঝছি যে মেকাপ লাগবে তখন থেকে বৃষ্টি আরম্ভ হয়ে গেল।আর উপায় আছে?বৃষ্টিতে ভিজিয়ে রোদে শুকিয়ে আবার ব্যাবহার করছেন আমাকে।এভাবে একসময় মেকাপ হল।এই পর্যন্ত ৫ কি ৬ বারের মত মেকাপ করেছি।লাষ্ট ঈদের ২দিন আগে ও করেছিলাম।এখন আমার শরীর ভালনা।ডান পা টার তলা ফুটা হয়ে গেছে।বৃষ্টিতে হাটলে মালিকের পা ভিজে যায় এটা বুঝি।বাম পায়েরটা মোটামুটি ঠিক আছে।এছাড়া মাশাল্লাহ আর কোন সমস্যা নেই।আমাকে কেউ দেখলে বলতে পারবেনা যে আমাকে কিনে এনেছে সাত মাস আগে।আমার মালিক এবারের ঈদে নতুন জুতো কিনেনি।কেন জানি মনে হচ্ছে আমাকে তার বেশি ভাল লেগেছে।এটা ছাড়া আর একটা কারণ থাকতে পারে।তা হল,তার কাছে টাকা নেই।অভাবে তো থাকার কথা না।আচ্ছা যাকগে।তবে আমি একটা বিষয় বুঝতে পারছি যে,প্রথম মালিক মনে হয় আমাকে তার অবৈধ! টাকা দিয়ে কিনছিলেন।নাহলে আমি তার কাছে থাকতে পারিনি কেন?বর্তমান মালিক এত লং টাইম ব্যবহার করছেন যে দুপায়ের তলা পুরোপুরি ভাবে না ছিঁড়লে রেহাই দিবেনা।উঁনি তার আসল টাকা দিয়ে কিনেছেন।এতে আপনাদের কারো সন্দেহ আছে?থাকলে বলতে পারেন।ওহ,বলবেন কেমনে?আমি আর আপনাদের সাথে কোন কথা বলতে পারবনা।যা বলবেন আমার মালিক জনাব “ইউসুফ মোহাম্মদ সিদ্বাত“কে বলবেন।আমার এবং আমার মালিকের জন্য দোয়া করবেন।আমি যাতে আমার সম্পূর্ণ দিয়িত্ব পালন করতে পারি।এখন যা বলার উনাকেই বলেন।আমি এখানেই বিদায় নিচ্ছি।
সবাই ভাল থাকুন। 😀
নোটঃ লেখাটা ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে লিখেছিলাম বেশ কয়েকটা ব্লগে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সব লিঙ্ক হারিয়ে ফেলেছি। এবং নিজের ব্লগেও ছিলোনা। :-/
কয়েকদিন ধরে সেম গল্পই লিখবো লিখবো ভাবছি। সম্পুর্ন সত্য ঘটনা অবলম্বনে। 😛
তাই পুরোনোটা রিভিউ করতে অনেক চেষ্টায় খুঁজে পেলাম ফেসবুকে একটি মজার গ্রুপে।
যদিও আমার ব্লগটি টেকনোলোজি বিষয়ে তবুও সবাইকে ব্লগটি একবার ঘুরে আসার জন্য বলবো। অনুরোধ নয় 😉