Personal Blog | Travel | Tech

স্টোরি এবাউট চট্রগ্রাম – বান্দরবান – নীলগিরি – কক্সবাজার সাইক্লিং ট্যুর


*** সাবধানতা ***

বিশাল কাহিনি এটা, তাই ধৈর্য না থাকলে পড়ার দরকার নাই। 😉 আমি শুধু লিখে রেখেছি এই জন্যে যে, আমি মরে গেলে আমার পোলাপান যাতে এইসব কিছু দেখে কিছুটা সাহস পায়। 😛
আর এইসব এডভেঞ্চারমূলক কাহিনী পড়ার পরে কেউ যদি কোন ধরনের দুর্ঘটনার মুখোমুখি হন তাহলে আমি দায়ী নই। :3 শুধু মাত্র আমার ছেলে-মেয়ের কিছু হইলে তার জন্য একমাত্র আমিই দায়ী থাকবো। :v
তবে, আমার এইসব কিছু অর্জন আমি আমার ছেলে-মেয়ের “মা”কে উৎসর্গ করছি… :v

সকল সাইক্লিষ্ট এর কিছু কিছু ঝুকিপুর্ন ইচ্ছে থাকে। যা তাদেরকে পূরণ করতেই হয়। এতে তাদের সামনে যতই বাধা আসুক তাতে কোন লাভ হয়না। 
আমিও শুনেছিলাম নীলগিরি এবং পিক ৬৯ নামক জায়গার নাম। যেখানে সাইকেলে নাকি অসম্ভব, এবং আমার মত এই মানের সাইক্লিষ্ট সেখানে যাওয়া সম্ভব না। 😛 ইভেন আমার এলাকার বন্ধুরাও চ্যালেঞ্জ করেছে আমার দ্বারা ইম্পোসিবল সাইকেলে সেখানে পৌছানো। 😀 


আমি সেখানে পৌছেছি কিনা বা আমি পারি কিনা সেই গল্প নিয়েই লিখছি…

০৭.১০.২০১৪ – ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম
ঢাকা থেকে সাইকেল বাসে নিয়ে সেখান থেকে চালানোর প্ল্যান সবার।
ঢাকা থেকে শ্যামলী (১ নাম্বার নয় 😛 ) বাসে আমরা ৫ জন সাইক্লিষ্ট রওনা হই চট্রগ্রামের উদ্দেশ্যে সাইকেল বাসের ছাঁদে তুলে। টিকেট নিলাম ৬ টা। কারণ আমার স্ত্রী ও যাবে চট্রগ্রাম আমাদের গ্রামের বাড়ি। তাকে বারিয়ারহাট নামিয়ে দিয়ে আমরা চলে যাবো মিশনে। 🙂
১০ টার গাড়ি সায়দাবাদ থেকে ছেড়েছে সাড়ে ১১ টায়। রাত পৌনে দুইটায় তাকে বারিয়ারহাট নামিয়ে দিয়ে গাড়ি ৪ টার সময় পৌছে যায় অলংকার পুলিশ বক্সের সামনে।

০৮.১০.২০১৪ – চট্রগ্রাম থেকে বান্দরবান

অলংকার পুলিশ বক্সের সামনে সাইকেলগুলো ফিটিং করতে করতে অনেক সময় চলে যায়। তারপর চা-টা খেয়ে ৬ টার দিকে রাইড শুরু করি বান্দরবানের পথে। সকাল ৮ টার সময় পটিয়ায় এক রেস্টুরেন্টে নাস্তা করি। সাথে দুর্বল রাইডার থাকায় তুলনামূলক কম স্পীডেই রাইড হয়। আর কিছু পথ পরপরই রেস্ট টাইমের কারণে আমাদের বান্দরবান পৌছাতে দুপর ২ টার মত বেজে যায়। আর যেতে যেতে পথে পথে কত জায়গায় যে ফতোসেশন চলছে তার কোন সঠিক হিসেব কারোই জানা নাই এক মাত্র আল্লাহ ছাড়া। 😛

বান্দরবান শহরে ঢুকার ৫ কিঃমিঃ আগে থেকেই শুরু হইছে আপহিল-ডাউনহিল পথ। লাইফে এভাবে কখনই সাইকেল চালাইনি। আপহিলে যেমন কস্ট তার চেয়ে দিগুন মজা আর রিস্কি ডাউনহিলে। 🙂
দুপরে পৌছেই আড়াই থেকে তিন ঘন্টা হোতেলের সন্ধানে সময় কেটেছে। বিশেষ করে মাসুম ভাই অনেক কস্ট করেছে হোটেল খুঁজতে। বিকেল ৫ টায় খাওয়া দাওয়ার কথা ভুলে গিয়ে হোটেল খুঁজে শেষ পর্যন্ত ভালই একটা মিলেছে এবং হোতেলে উঠে গেলাম সবাই। প্রথমেই রুমে ঢুকেই গোসল সেরে নিলাম সবাই। এটা সেটা করতে করতে সময় সন্ধ্যা ৬ টা। সবাই মিলে জামান হোটেলে খেতে গেলাম। রাতের খাবার সহ খেয়ে আসতে আসতে রাত ৮ টা। প্ল্যান করলাম কখন কাল নীলগিরির উদ্দেশ্যে বের হবো। মাসুম ভাই বলেই দিলো খুব ভোরে বের হতে হবে। নাহলে নীলগিরির পথে পুলিশ চেকপোস্ট ঝামেলা করবে।
ঢাকা থেকে বাসের জার্নি আর চিটাগাং থেকে ৮০ কিঃমিঃ সাইক্লিং এর ক্লান্তিতে সবাই ঢলে পড়লাম ঘুমের দেশে…

০৯.১০.২০১৪ – বান্দরবান থেকে নীলগিরি
ওহ, বান্দরবানে ঢুকতেই আমার সাইকেলের পেছনের গিয়ারে প্রবলেম দেখা দিয়েছিলো। যেটা আমাকে সামান্য প্যাঁরা দিবে ডাউনহিলের সময়, আমি শিউর। কিন্তু ঠিক করিনি। দেখিনা, চলতে চলতে যদি ঠিক হয়ে যায়… 😀
নীলগিরির পথে সাইক্লিং করবো সেই চিন্তায় তো আমি অস্থির। কখন ভোর হবে আর সাইকেল নিয়ে বের হয়ে যাবো!!!! ইভান ভাইয়ের ও ঘুম আসছেনা আমি খেয়াল করে দেখলাম। সবাইকে ডেকে দিয়ে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিলাম। ভোর সাড়ে ৬ টায় জামান হোটেলে পরটা আর মুগের ডাল,ডিম দিয়ে নাস্তা সেরেই রওনা হলাম সবাই নীলগিরির পথে। চা ও খেতে পারিনি। পাহাড়ে উঠে তারপর খাবো সেই চিন্তায়। বাজার রোড থেকে হোটেল প্লাজা রোডের আরো সামনে দিয়ে আমরা চিম্বুকের রোডে ঢুক্তেই দেখি প্রথমেই বিশাল আপহিল। 😀 তারপর বাস স্টেশন, যেখান থেকে থানচির বাস ছাড়ে এবং চান্দের গাড়িগুলো ভাড়া পাওয়া যায়।
শুরু হল পথ চলা…

কিছুদুর যাওয়ার পরেই বিজিবি চেকপোস্ট। সেখানে বিজিবি আমাদের দেখেই চোখ কপালে তুলছে, সাইকেলে??? o.O
সামনে মাসুম ভাই যায় উনার সাথে কথা বলতে। মাসুম ভাই জানিয়েছেন যে উনি এর আগেও এসেছেন, ইনশাআল্লাহ্‌ কোন প্রবলেম হবেনা। সেখান থেকে পাহাড় আর মেঘের সৌন্দর্যের চেহারা দেখা শুরু হলো। সেখান কয়েকটা ছবি তুলেই সামনে এগোলাম। ১৫/১৬ কিঃমিঃ পড়ে কি যেনো একটা পাড়া পেলাম, সেখান যেয়ে হালকা নাস্তা আর সেরাম চা খেলাম সবাই। আরো ৮/১০ কিঃমিঃ পড়ে চিম্বুক নামের পাহাড়টা পেলাম, যেখানে থাকার জন্য এবং ঘোরার জন্য দারুন এলাকা। এটুকু পথ আসতে আসতে আমাদের যত গাড়ি দেখে গেছে সবাই অবাক হয়ে যাচ্ছি, How is it possible??? o.O
আমি চিম্বুক পাহাড় আসার আগেই অনেক স্পীডে আসায় সবাইক কিছুটা পেছনে ফেলে চলে আসি, এবং যেখানে চিম্বুক ০০ কিঃমিঃ লেখা সেখানে সেলফি তোলার সময় এক সুন্দরী (আপু!!! 😛 ) চান্দের গাড়ির সামনে থেকে থাম্বস আপ আর V চিহ্ন দেখিয়ে চলে গেলো । তখন আমি সেলফি তোলায় বিজি। 😀 চিম্বুকে এসে আমি পানি কিনে স্যালাইন বানাচ্ছি আর উনিই আমাকে পেয়ে ২ মিনিটের সংক্ষিপ্ত  সাক্ষাৎকার নিলো। কই থেকে আসলাম আর কই যাবো ব্লা ব্লা ব্লা… এর মধ্যে সাথের রাইডার রা চলে এসে বাস স্টেশনে যেয়ে খাওয়ার দাওয়া শুরু করে দিলো। 
সেখানে খেয়েই সবার ন্যাচারাল কলের ডাকে সাড়া দিতেই হয়। এবং ১ ঘন্টা পড়ে আমরা সামনে এগোতে থাকি। আনুমানিক ১০ কিঃমিঃ আসার পড়ে একটা দোকানে কলা আর আনারস থেকে আনারসের প্রতি আগ্রহ জাগে সবার। দোকানি চাকমা সেই দাদাকেই বলি কেটে দিন। তারপর দুইটা খেয়েই ফেললাম রাস্তায় বসে। মাঝে মাঝে গাড়ি আসে খাবারের সময় ডিস্টার্ব করতে। 😛 সেখানে আমাদের কাঁচামরিচ দেওয়া হইছিলো আনারসের সাথে খেতে। কাচামরিচগুলা ছোট। আমি আগে থেকে কাচামরিচের প্রতি আকৃষ্ট। তাই মোটামুটি বড় কামড় দিয়েছি প্রথমে। সাথে সাথে কারেন্টের মত শকড খেলাম। এতো ঝাল যে আমার মুখ পুরা গরম হয়ে গেলো। আমার লাইফেই খাইনি এমন মরিচ। তবুও আনারসের সাথে ২ টা কাচামরিচ গিলে ফেলছি। 😛

এই পথে প্রথম আসায় সামনে কি ছিলো আমার জানা নেই। তবে জানা ছিলো যে সামনে গেলেই পাবো বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু রাস্তাটি, যার নাম Peak69 B|

কিছুদুর যাওয়ার পরেই এমন উঁচু একটা হিল আসছে যে আমাদের উঠতে পুরাই খবর হয়ে যাচ্ছে। আমাদের ৫ জনের মধ্যে আমি আর জাবিদ কোন জায়গায় এক ফিট পথ ও হেটে আসিনি। বাকিরা এসেছিলো। তো সেই হিলে উঠতে উঠতে অনেক ক্লান্ত হয়ে গেলেও থামিনি। মাসুম ভাই জোড় করে থামিয়ে দিয়ে বললেন, ইভান ভাই অনেক পেছনে আছে। উনাকে নিয়েই উঠবো, তাছাড়া উঠবো না। এর মধ্যে একটু একটু করে জাবিদ চলে গেছে সমান্তরাল হিলে। আমাকে মাসুম ভাই আটকিয়ে রেখেছে, নাহয় জানে আমি ঠিকই উঠে যেতাম সেই এক চান্সে। ইভান ভাই আসার সাথে সাথেই মাসুম ভাই প্যাঁডেল মেরে উঠছেন দেখে আমিও উঠেই দেখি এটাই সেই Peak 69 😀 The Highest Road Of Bangladesh… wow wow wow
Just Now Completed 1st Mission 😀

এখানে এসে দেখলাম একটা ফ্যামিলি বেড়াতে এসে তাদের গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। তারাও এখানে পিকনিক করছেন সেই ফাঁকে। 😛 অনেকেই এসে দাঁড়ায়, দেখে এখান থেকে মেঘের খেলা। মেঘ কতই না কাছে। যদিও আমরা আসতে দেরি করেছি যার কারণে মেঘ অনেক দূরে চলে গেছে। সকাল ১১ টার মধ্যে আসলেও নাকি মেঘ পাওয়া যায়। যদিও এটা গরমের সিজন। আর শিতকালে তো কথাই নাই। 😛

অনেক্ষন ছবি তুলে প্রকৃতি আর মেঘের সাথে সময় কাটিয়ে দ্বিতীয় মিশনের দিকে এগোচ্ছি আমরা। তবে এবার আমি কাউকে ছাড় দিতে পুরোই নারাজ। যেভাবেই হোক  নীলগিরি সবার আগেই উঠব। জানি অনেক কঠিন হবে আমার জন্য। আর সেই পথ ও কম না এখান থেকে। প্রায় ১৬ কিঃমিঃ পথ বাকি আছে। সেই ১৬ কিঃমিঃ এর বেশীরভাগ পথই শুধু আপহিল। 🙂
যেতে যেতে একদসময় আশেপাশের কিছু মোটরসাইকেল আরোহীদের বলতে শুনি, এরা সাইকেলে চলে আসছে দেখ…
এমনই কয়েকজনকে বলতে শুনে একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, নীলগিরি আর কত দূর?
উত্তরে বললেন, ওই যে দেখা যায় হিল রিসোর্ট। আমাকে দেখালেন অনেক দূরে উঁচু পাহাড়ে ঘর। আমিও ছবিতে এমনই দেখেছিলাম হিল রিসোর্ট এর অবস্থা। পেছনে তাকিয়ে দেখি আমার সাথের রাইডার কেউই নাই। মানে অনেক পেছনে পড়ে গেছে। 
আইডিয়া করলাম, নীলগিরি আরো ৪/৫ কিঃমিঃ বাকি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে দূরের হীল রিসোর্ট। একটু পরেই একটা বড় বাঁক আসছে। তার আগে ঝাপসা লেখা সাইনবোর্ডে লেখা আছে ” বাঁক পেরোলেই নীলগিরি হিল রিসোর্ট”। 
এটা দেখেই থামলাম সবার জন্য অপেক্ষায়। সাথে একটা সেলফিও তুললাম। 😛 পথের মানুষগুলা আমাকে দেখে পাগলই ভাবছেন মনে হয়। এতো দূর কিভাবে পসিবল? কয়েক মিনিট অপেক্ষা করে আর পারতেছিনা সহ্য করতে, কখন নীলগিরি পৌছাবো? ব্যাস টান দিলাম, আর অপেক্ষা নয়। সেখানে যে বাঁক লেখা আছে, এই বাঁক সেই বাঁক নয়। কত বিশাল বাঁক এর পড়ে আরো দুইটা বাঁক এর সাথে আছে চরম উঁচা হিল। 
একদম লো গিয়ারে টেনে উঠে গেলাম গীনগিরি হিল রিসোর্ট গেটে। যেখানে টিকেট কাটেন পর্যটকদের প্রবেশের জন্য। আমাকে একজন আর্মি ডেকে বললেন,
– আর উপরে যাওয়া যাবেনা। সাইকেলে আসছেন?
– হ্যাঁ
– বলেন কি? কিভাবে সম্ভব? ততক্ষনে আশেপাশের অনেক মানুষ আমাকে দেখার জন্য ভীড় করে ফেলছেন। আমি পাসের এক জায়গায় বসে রেস্ট নিচ্ছি।
এই অবস্থা দেখে আর্মি ম্যান হেসে বললেন, যান আগে উপরে ঘুরে আসেন, পরে টিকেট নিবেন

আমিও টেনে উপরে উঠলাম আর একদম উচুতে যেয়ে কয়েকটা ছবি তুলে তারপর রেস্ট নিলাম। পাশের এক হিলে যেয়ে দেখলাম আমার সাথের রাইডার রা মাত্র আসছেন, আর থেমে থেমে ছবি তুলছে যেখানে আমিও তুলেছিলাম। জোরে চিৎকার দিয়ে ডেকেছিলাম, কিন্তু শুনেনি। একটু পাশে এসে ছায়ায় রেস্ট নিচ্ছি।
এর মধ্যে কিছুক্ষন এ জায়গায় ও জায়গায় ছবি তুললাম। আশে পাশের অনেকেই এসে জিজ্ঞেস করছেন আর তাদের রিপ্লাই দিচ্ছি। সবাই আসার পরে একসাথে অনেক্ষন কাটালাম। ফটো সেশন চলছে কয়েক দফায় হেলিপ্যাড এ সহ। 😀

জায়গাটা এতোই সুন্দর যে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। মেঘ তো অনেক কাছে সেটা আলাদা। কিন্তু উপরে থেকে বাংলাদেশের একাংশ দেখা যাচ্ছে এখান থেকেই সেটার ফিলিংস কেমন একটু ভেবে দেখছেন? ওহ হ্যাঁ, সকল পর্যটকের সেখানে প্রবেশে টিকেট লাগলেও আমাদের মত সাইক্লিষ্টদের সম্মানে কোন টিকেট লাগে সেখানে প্রবেশের জন্য। মানে সম্পুর্ন ফ্রি এন্ট্রি নীলগিরি হিল রিসোর্টে 😀
বিকেল হয়ে অন্ধকার নেমে আসার আগেই আমাদের রওনা করতে হবে। তবে সাইকেলে যাবো না। গাড়িতে যাবো সিদ্ধান্ত নিলো সবাই। শেষ গাড়ির আগের গাড়িটা চলে আসবে এখনই। কিন্তু বাসে ৫ টা সাইকেল ছাঁদে সহজেই উঠাবেনা কেউই। এমনই সবাই পাশে বলাবলি করছেন। রাস্তায় হঠাৎ দূতের মত হাজির হলেন সিভিল ড্রেসে একজন আর্মি পার্সন। বললেন, আপনারা কোন চিন্তা করবেন না। আমি দেখছি কোন বাস আপনাদের নিবেনা। যেই বাসই আসুক ওর বাপে নিবে আপনাদের। ছাঁদে আপনারা আর আপনাদের সাইকেল ছাড়া কোন যাত্রি উঠানো হবেনা। এই লোকের এমন মহৎ সাহস দেখে আমরা থ হয়ে গেলাম। হ্যাঁ, হল ও তাই। বাস আসার পরে ড্রাইভার কে ধমক দিলেন, কেউ যেনো ছাঁদে না উঠে সাইকেল ছাড়া। আগে সাইকেল আর উনারা উঠে যায়গা থাকলে তারপর অন্য মানুষ উঠাবে। আমরা চুপচাপ শুনছি দাড়িয়ে। এমন সময় উনি উঠতে বলায় সাইকেল তুলে সবাই ছাঁদে বসে উনাকে সালাম আর থ্যাংকস জানিয়ে বিদায় নিলাম। উনিও হেসে বিদায় দিয়ে সম্ভবত খুশিই হয়েছেন। 🙂 আমাদের সাথে লাল বাগ এলাকার ৫ জন উঠেছে আমাদের মতই বয়সী। সব ইয়ো পোলাপাইন। দুই আড়াই ঘন্টা যতক্ষন ছিলাম ততক্ষন অনেক মজায় কেটেছে তাদের সাথে। বান্দরবান আসতে আসতে আমাদের অনেক সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আগামীকাল আমি একাই চলে যাবো কক্সবাজার আর তারা ৪ জন চলে যাবে ঢাকায়। তাই বান্দরবান এসেই আগে টিকেটের খোঁজ করে না পেয়ে হোটেলে ফিরে আসলাম। গোসল করে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে এসে ঘুমাতে ঘুমাতে রাত ১১ টা।
এই দিনটা আসলেই কখনো ভুলে যাওয়ার নয়। কারণ যা অর্জন করেছি তাতে গর্ব বোধ করতেই হয়। 🙂 আল্লাহ্‌র দেওয়া সেরা ইঞ্জিনে ভর করে দুই চাকায় Peak69 এবং নীলগিরি B|
১০.১০.২০১৪ – বান্দরবান থেকে কক্সবাজার
ভোরে উঠে ফ্রেস হয়ে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে যায় কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। জামান হোটেলে একটা পরটা আর একটা চা খেয়েও বের হয়ে যাই। শহরে ঢুকতে যেই আপহিল আর ডাউনহীল দেখেছিলাম তা এই সকাল বেলায়ই আমাকে দুর্বল করে দিছে একদম বিজিবি ক্যাম্প পর্যন্ত। :/

যদিও এর পরের স্পীড এর জন্য “আলহামদুলিল্লাহ্‌” বলতে হয়। 🙂 কেরানিরহাট থেকে বাম দিকে সোজা কক্সবাজারের রাস্তা। কানে হেডফোন দিয়ে বউয়ের সাথে সকাল বেলা কথা বলতে বলতে চলে গেলাম অনেক দূর। যেখানে “স্বাগতম কক্সবাজার” লেখা আছে সেই পর্যন্ত শুধু প্রেম করেছি ফোনে বউয়ের সাথে। 😛 পথ কত কিলো জানিনা, তবে অনুমান করতে পারি প্রায় ২৫-২৭ কিঃমিঃ…

আমি প্রায় সময়ই একা হাইওয়ে তে সাইক্লিং করার সময় বউয়ের সাথে সময় কাটাই ফোনে আর মন+শরীরের স্পীডেই সাইক্লিং করে যাই। এতে আমার মনে হয় আমার সাইক্লিং ভালো হয়। 😛
কক্সবাজার জেলায় ঢুকার মুখে বেশ কয়েকটা ছবি তুললাম একা একা। তারপর সামনে কিছু দূর এক বাজারে যেয়ে আবার নাস্তা করলাম।
চকরিয়া নামের জায়গার কথা আগেও শুনেছি কিন্তু দেখা হয়নাই। আজকে দেখলাম। বিশাল এলাকা আর বাজার চকরিয়া। তবে রোড টা চরম লাগলো। ছাড় লেনের মাঝের দুই লেনের পরেই লোহার রেলিং দেওয়া। দেখে ভালই মনে হইছে। 😀
কিছু দূর আসতেই একটা চুকন ব্রিজ পেলাম যেখান থেকে শুকনো নদীটা চরম লাগছিলো। মাঝের পথচারি থামার গ্যাপটায় থেমে ছবি তুললাম। তবে ভীষণ রিস্কি ছিল যে দুই ধারে গাড়ি গেলে আর এক ইঞ্চিও জায়গা থাকেনা। সেই গ্যাপে সাইকেল টাকে কোন রকমে ঢুকিয়েছিলাম। একটুও যদি বের হওয়া থাকতো তবে নির্ঘাত কোন দুর্ঘটনা ঘটে যেতো। আশেপাশের অনেক মানুষই চিডিয়াখানার প্রানীর মত আমার দিকে তাকাচ্ছে। 😛
এদিন জুমার দিন ছিল। নামাজের ইচ্ছে থাকলেও শর্ট প্যান্ট থাকায় ইচ্ছেটা চলে গেছে। ব্যাগে কোন ফুল প্যান্ট বা ট্রাউজার নেই।
জুম্মার সময় পৌছালাম “নতুন অফিস বাজার” নামের জায়গায় থেমেই দেখি চরমভাবে বৃষ্টি নামছে হঠাৎ। :-O
ক্ষুধা ছিল মোটামুটি। বৃষ্টি দেখে ক্ষুধাও চলে গেছে। :/
সেখানেই একটা দোকানে নিরিবিলি বসে ছিলাম। দোকানের নাম ছিল অদ্ভুদ। “নির্যাতিত স্টোর” 😛
সেই যে বৃষ্টি শুরু হইছে আর থামার কোন নাম গন্ধ ও নাই। :/ সেখানে জিমাতে জিমাতে বেজে গেলো ৩ টা।
ওহ আচ্ছা, যে কথাটা বলাই হয়নি। 😉
আমার স্ত্রী আসছে কক্সবাজার বাসে। চিটাগাং থেকে রওনা হয়েছে ১ টায়।তার মানে সে আমার আগে কক্সবাজার পৌছাতে পারবেনা। 😛
কিন্তু যখন বিকেল ঘনিয়ে আসছেই তখন আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো। তখন সে মাত্র কেরানির হাট আসছে। আর আমি চকরিয়া পার হয়ে ঈদগাহ এর কাছাকাছি। জিদ করে হালকা বৃস্টিতেই দিলাম টান। খুব স্পীডেই চলে আসছি ঈদগাহ বাজার। আর আমি তার সাথে ফোনেই কথা বলছি একটু পর পর। তাকে এভাবেই ডিরেকশন দিচ্ছি যে, তুমি কক্সবাজার আর কত কিঃমিঃ লেখা দেখলেই আমাকে কল করে জানাবে। এতে করে আমি বুঝতে পারবো সে আমার থেকে কত দূর পিছিয়ে। 😛 সেই নির্যাতিত স্টড় থেকে স্টারত করে আর কোথাও থামা হয়নি ২৫ কিঃমিঃ পথে। এখানে এভারেজ ছিল ২৫ কিঃমিঃ। যা অবিশ্বাস্য হলেও বাস্তব। আর এই রোডের কথা না বললেই নয়, অনেক ভালো রোড। কোন ভাঙ্গা বা গর্ত নেই।
হাইওয়ে তো এমনই হওয়া উচিৎ। 😀

শেষ কক্সবাজারের কাছাকাছি যখন আসি, তখন আমার বাকি আর ৩ কিঃমিঃ আর তার বাকি ১২ কিঃমিঃ… অর্থাৎ সে অনেক্ষন আগেই ঈদ্গাহ পেরিয়েছে।
আমি যখন কক্সবাজার ঢুকি তখন অন্ধকার হয়েই যাচ্ছে। খুবই স্পীডে বিচে গেলাম। আর কয়েকটা ছবি তুললাম আরেকজন কে দিয়ে। 😛 
তার কল পেয়ে জানলাম সে ও নাকি চলে এসেছে কক্সবাজার, মাত্র নামলো গাড়ি থেকে। 
আমার বেয়াই হোটেল বুক দিয়ে রেখছেন। হোটেল সি সান রিসোর্ট। খুঁজে নিয়ে সেখানে গেলাম, আর হোটেল বয় কে দিয়ে সাইকেল উপরে রুমে পাঠিয়ে দিলাম। সে আসলে এক সাথে ঢুকবো হোটেলে সেই হিসেবে আমি অপেক্ষা করছি হোটেলের নিচে তাকে স্বাগতম জানানোর জন্য। ^_^
অবশেষে সে আসলে দুজন একসাথে হোটেলে উঠি।
এখন থেকে আমার সময় শুধু তার জন্য। <3 কাল ভোরেই মেরিন ড্রাইভে সাইক্লিং হবে ইনশাআল্লাহ্‌। B|
১১.১০.২০১৪ – কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভে সাইক্লিং
ভোর ৬ টায় বের হলাম হোটেল থেকে সাইকেল নিয়ে। ওয়েটিং রুমের অনেক অপেক্ষমাণ পর্যটক যারা রুমের অপেক্ষায় আছেন তারা আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আমি সাইকেল নিয়ে নামছি দেখে… o.O
বিচে সাইকেল চালানোর মজা লুটে নিলাম। ছবি তুললাম কয়েকটা। তারপর একটা ডাব খেয়ে মেরিন ড্রাইভের দিকে ছুটলাম। কিসের স্পীড তুলবো সেখানে? এতোঈ দারুন পরিবেশ আর সিনারি যে ছবি তুলতে তুলতেই তো স্পীড ফডত গিয়ে। 😛 মানে লাঠে উঠছে। 😀

তারপর অর্ধেক পথ যাওয়ার পরে ন্যাচারাল কল আমাকে আর সামনে যেতে দিলোনা। 😛
হোটেলে ফিরে আসলাম যেখানে ৫০+/- মারার কথা সেখানে ২৫+/- মেরেই। :-/ আর এখানেই আমার সাইক্লিং এর পার্ট শেষ ঢাকা যাওয়ার আগ পর্যন্ত। 🙂
একটু পর নাস্তা করেই বিচে ডুবামু দুজনে… 😀
কক্সবাজার এ বিচ ফটোগ্রাফারের তোলা আমাদের দুজনের একটি ছবি
এই ট্যুরের সব ফটো এ্যালবাম এখানে
ফেসবুকে নোট এখানে
এই ট্যুরের Endomondo Tracking লিঙ্কঃ 
সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ পোস্টটি পড়ার জন্য। 😀 
Spread the love

2 thoughts on “স্টোরি এবাউট চট্রগ্রাম – বান্দরবান – নীলগিরি – কক্সবাজার সাইক্লিং ট্যুর”

Leave a Comment